জাকারিয়া তামর সিরিয়ার দামাসকাসে ১৯৩১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। আরবী ছোটোগল্পের জগতে জাকারিয়া এক অতি উল্লেখযোগ্য নাম। শিশু সাহিত্যিক হিসেবেও অতি পরিচিত জাকারিয়ার শৈল্পিক সত্তার আয়না হল মূলত তাঁর তীক্ষ্ণ স্যাটায়ারধর্মী লেখা যা সিরিয়ার আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থা ও নিয়ম-নীতির অন্তঃস্থল পর্যন্ত তুলে ধরে এক স্বচ্ছ ভঙ্গিমায়। সেরকমই এক স্যাটায়ারধর্মী গ্রন্থ হল ‘Breaking Knees’। ২০০২ সালে প্রকাশিত এই গ্রন্থের গল্পগুলি এমন এক পৃথিবীতে বহন করে নিয়ে যায় পাঠকদের যে পৃথিবী যেমন প্রমোদক তেমনি ভয়াবহ: কুহক, অবৈধ সম্পর্ক, বহুগামিতা, নারীদের অবদমিত যৌনাকাঙ্ক্ষা, তাদের অবদমিত জীবনযাপন, জীন, দুর্নীতি, স্বৈরতান্ত্রিক শাসন, রাষ্ট্রযন্ত্রের অত্যাচার— এই সবকিছুই তাঁর আপাতবিনোদক লিখনশৈলীর খোলসের ভিতরে লুকিয়ে আছে।
এখানে জাকারিয়া তামর রচিত ‘Breaking Knees’-এর দুটি অণুগল্পের ভাষান্তরের প্রয়াস করা হয়েছে।
***
১
বয়সের ভারে ন্যুব্জ এক বৃদ্ধা একটি পার্কে যান যে পার্কের গাছগুলোর সব পাতা ঝরে গেছে। সেখানে তিনি একটি বিরাট পাথরের মূর্তির সামনে দাঁড়ান। মূর্তিটা একজন লম্বা লোকের যাঁর মুখটা কঠিন, আর ডান হাতটা এমন ভঙ্গীতে উঠে রয়েছে যা দেখে সমীহ জাগে। মনে হয় তিনি যেন সেখানে হাঁটু গেড়ে বসে থাকা অদৃশ্য অনুগ্রহপ্রার্থীদের আশীর্বাদ করছেন। ওই বৃদ্ধা ভয়ে বিহ্বল হয়ে পড়েন সেই মূর্তির সামনে। তাঁর পা কাঁপতে থাকে। আসলে কিন্তু তাঁর চোখ ছুরির মতো ঝলসে উঠতে চেয়েছিল ওই লোকটার সামনে। ওই লোকটা তাঁর ছেলেদের আর স্বামীকে খুন করেছে যে! কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও বৃদ্ধার চোখের স্বভাবসিদ্ধ দুঃখী ও নম্র ভাব কিছুতেই দূর হল না। তাঁর মনে হতে লাগে তিনি যেন কুঁচকে যাচ্ছেন। এবং ক্রমশ কুঁচকে যেতে যেতে তিনি অবশেষে একেবারে অদৃশ্য হয়ে যান। তাঁর চারপাশের সবকিছুও কুঁচকে যেতে থাকে ক্রমশ, এবং এক সময় তারাও অদৃশ্য হয়ে যায়। কিছুই আর অবশিষ্ট থাকে না। শুধু ওই মূর্তিটা থেকে যায়। আর থেকে যায় ওই পাখিগুলো যারা ওই মূর্তিটার উপরে পায়খানা করতে ভালোবাসে।
২
এক স্বামী-স্ত্রী অন্ধকার রাতে শুতে যাওয়ার তোড়জোড় করছিল। স্ত্রী নরম গলায় তার স্বামীকে বলে, “আমার জানা সব মেয়েরাই রাত ভালোবাসে। কিন্তু আমি সহ্য করতে পারি না। কেন পারি না আঁচ করতে পারো?”
“কারণ তুমি রাতের বেলা উপুড় হয়ে শুতে পছন্দ কর, কিন্তু আমি তোমায় চিৎ করে শোয়াই”, কোনো রাখঢাক না রেখেই স্বামী উত্তর দেয়।
স্ত্রী তখন উপুড় হয়ে শুয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, “কেন তুমি আমাকে রাতের মাধুর্য বোঝানোর চেষ্টা কর না? আমি একজন নারী, যে কোনো চরম অভিমত পোষণ করে না, কিন্তু যে যুক্তি-প্রমাণ সহ মতামত শুনতে ভালোবাসে”।
হাঁপ ধরে যাওয়া ভাঙা গলায় তার স্বামী তাকে রাত সম্বন্ধে বলতে লাগে। বাইরে ঠাণ্ডা হাওয়া বইছিল; স্ত্রী তার স্বামীকে আরও বেশি জড়িয়ে ধরে। হিটারে কাঠ পুড়ে শেষ হয়ে গেছে এবং আরও কাঠ দেওয়া জরুরী— স্ত্রী জানায় তার স্বামীকে। কিন্তু স্বামী ওঠে না। বরং সে ওইভাবেই, ওই অবস্থাতেই শুয়ে থাকে। তার মনে হয়, সেই যেন কাঠ আর তার স্ত্রী যেন হিটার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন