ঘুমটা ভাঙলো ভোর পাঁচটার একটু আগে। জলটল খেয়ে ঘরের লাগোয়া বারান্দাটায় একটু পাইচারি করে আবার শুতে এসে দেখি বিছানার ওপর পাশের বালিশটাকে জড়িয়ে দিব্যি বসে আছে একটা মোটাসোটা লাল রঙের বেড়াল। মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বরে বেড়িয়ে এলো, "চন্দ্রবিন্দু!
বেড়াল এবার খুব বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়তে নাড়তে পরিস্কার বাংলায় বলে উঠলো, "হলো না! হলো না!" আমার একটু বিরক্তই লাগলো, "বললেই হলো চন্দ্রবিন্দু নয়! দিব্যি ল্যাজ থাবা নিয়ে হযবরল-র পাতা থেকে উঠে এসেছো।"
বেড়াল উত্তরে কিছু বললো না। বরং ল্যাজটা পিঠের ওপর ফুলিয়ে তুলে মিটিমিটি হাসতে লাগলো। এবার আমার ভারি রাগ হলো। সুর চড়িয়ে বললাম, "শুধু উঠেই যে এসেছো তা তো নয়! এই মাঝরাত্তিরে আমার কল্পনার সু্যোগ নিয়ে আমারই বিছানা জুড়ে বসে আছো। আচ্ছা চন্দ্রবিন্দুই যদি না হও তাহলে কে বলোতো তুমি?"
বেড়াল এবার গম্ভীর হলো। পাশের বালিশটাকে ছেড়ে সামান্য আড়মোড়া ভেঙে খাটের কোণে গিয়ে বসলো। তারপর খুব অন্যমনস্ক ভাবে বললো, "আমি ঌ কার। তবে চন্দ্রবিন্দু যে একেবারে নই সে কথাও ঠিক নয়।"
বোধগম্য হলো না। মরিয়া হয়ে বললাম, "তুমি তাহলে লিকার! মানে দুধ ছাড়া যেমন পানশে চা!"
"আরে, ধুর মশাই! ঌ কার - ঌ কার! স্বরবর্ণের পঞ্চম বর্ণ যা বাদ পরে গেছে তোমাদের দুনিয়া থেকে, মাঝেসাঝে বেঁকা হরফে যাকেই আবার কিনা ফিরিয়ে আনতে হয় গোঁজামিল দিতে সেই ঌ কার।"
"বুঝলাম!" একটু ধাতস্থ হয়ে বললাম, "তাহলে তুমি ঌ কার-ই হবে নিশ্চিত, চন্দ্রবিন্দু কভি নেহি।" এভাবে ভুল নামে ডাকার জন্য একটু একটু খারাপই লাগছিলো।
ঌ কার দরজার দিকে এগোতে এগোতে বসে পড়লো। ঝাঁঝিয়ে উঠে বললো, "আচ্ছা পাগলের পাল্লায় পড়া গেলো দেখছি! বলোতো, কাল যে রতন পাকরাশির মুখ ভর্তি চাপদাড়ি ছিলো, আজও আছে? তারপর ধরো, একটা দেশ ছিলো। একটা পাঁচিল তুললে কি তুললে না হয়ে গেলো দুটো ভূগোল বই। তা তোমার কথাই ধরো না!তোমার বিছানায় আগে তিনটে বালিশ থাকতো, এখন একটা মোটে, ছোঃ! যাদের দোকানে আগে পাওয়া যেতো চশমা আর পেনসিল, তাদের দোকানেই বিক্রি হচ্ছে লাঠি আর মানুষ।যে পাগলা খুড়ি আগে দোরে দোরে ভিক্ষে চাইতো, আজ সে অটোগ্রাফ বিলোচ্ছে।তার বেলা! আর আমার বেলাতেই দোষ! চাঁদের মাথায় মহাকাশযান গিজগিজ করছে,তাছাড়া উচ্চারণে তোমাদের এতোই যখন আপত্তি, তখন স্যুট করে নেমে এসে মিশেছি স্বরদের দলে। এলিডি ফেলিডি নয়, তোমাদের প্রয়োজনে চোখ খারাপ টিউবের মতো স্রেফ জ্বলছি আর নিভছি।" ঌ কার একটু থামলো। দম নেবার জন্যই বোধহয়। তারপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে চললো, "সেদিনের জন্যে আমি ছিলাম চন্দ্রবিন্দু আর আজকের জন্যে ঌ কার। তবে কিনা আগামীকালে যদি আবার আমার সামনে এসে পড়ো তাহলে আর শুধু ঌ কার বলেই ধরে নিও না। বুঝলে?" দরজা দিয়ে বেড়িয়ে যেতে উদ্যত হলো সে।
তবে অনেক বিস্ময়ের শেষে এবার আমার ফুল্টস্ বলটায় টাঙিয়ে ছয় চালানোর পালা।
মুচকি হেসে বললাম, "সবই তো হলো। একটা জিনিষে যে ভুল হয়ে গেলো তোমার!" ঌ কার আবার দাঁড়িয়ে পড়লো।
"মানে, ঐ গুণতির ব্যাপারটা আর কি।" বুঝিয়ে বললাম, "তা হিসেব করে দ্যাখো, ঌ কার হলো গিয়ে স্বরবর্নের অষ্টম বর্ণ। পঞ্চম বললে কিভাবে?"
ঌ কার এবার মুখটা বিকৃত করে ভেংচি কেটে উত্তর দিলো, "রাখো তো তোমাদের হিসেব! যেদিক দিয়ে অ্যাদ্দিন ভেবে এসেছো তার বাইরেও যে কিছু দিক থেকে যায় সেটা ভেবেছো কি? পুরোটাই নির্ভর করছে তুমি কোন দিক দিয়ে গুণছো আর আদতেই অঙ্কটা মেলাতে চাইছো কিনা তার ওপর।"
বলেই সে দরজা দিয়ে বারান্দার রেলিং ডিঙিয়ে পগার পার। মাথার ভেতর ঘুরপাক খেতে লাগলো কটা বর্ণ... হ য ব র ল ... ঔ ও ঐ এ ঌ!
অঙ্কন – বুধাদিত্য
Osadharon laglo
উত্তরমুছুন